নরেশ ভকত, বাঁকুড়াঃ বাঁকুড়াঃ বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা হলেও বিশেষ করে বাঁকুড়া জেলার টুসু পরব শ্রেষ্ঠ পরব । বেশিরভাগ বাঁকুড়া জেলার প্রায় প্রত্যেকটি গ্রাম অঞ্চলে এই উৎসব দেখতে পাওয়া যায় ।এবছর ও পৌষের মকর সংক্রান্তিতে টুসু পরবে মাতল রাঢ়বাংলা।
মূলত বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং বর্ধমান জেলায় এই উৎসবের আয়োজন বেশি দেখ যায়। টুসু উৎসবের মূল আকর্ষণ পৌষ সংক্রান্তির আগের শেষ ৪ দিন। এই দিনগুলি চাঁউড়ি, বাউড়ি, মকর এবং আখান নামে পরিচিত। চাঁউড়ির দিনটিতে বাড়ির মেয়েরা উঠোন গোবর এবং মাটি দিয়ে নিকিয়ে সেখানে চালের গুড়ি তৈরি করে থাকেন। বাউড়ির দিন ওই চালের গুড়ি দিয়ে ত্রিকোণাকৃতি এবং অর্ধচন্দ্রাকৃতি পিঠে তৈরি করা হয়। বাউড়ির রাতে গ্রামের কুমারী মেয়েরা ছাড়াও গৃহবধূরা টুসু গানে অংশ নেয়। পরের দিন মকর।
মকর অর্থাৎ পৌষ সংক্রান্তির ভোরে মেয়েরা শোলা বাঁশের কঞ্চি এবং কাগজ দিয়ে তৈরি চৌদল বা ভেলায় ওই টুসু দেবীকে বসিয়ে গান গাইতে গাইতে স্থানীয় পুকুর বা নদীতে নিয়ে গিয়ে ভাসিয়ে দেয়।
রাঢ়বাংলার আঞ্চলিক পরবগুলির মধ্যে টুসু পরব সবথেকে জনপ্রিয়। মূলত তপশিলি সম্প্রদায়ের মধ্যে এই পরব পালন করতে দেখা যায়। তবে পৌষের হাড় কাঁপানো শীতে মকর সংক্রান্তির পিঠে পরবে মেতে ওঠেন আপামর বাঙালি। বুধবার মকরের আগের দিন বিষ্ণুপুর শহরের বিভিন্ন জায়গায় ওই টুসু ভেলা বা চৌদোল বিক্রি করতে হাজির হয়েছিলেন অনেকে। ভেলার সাইজ অনুযায়ী দাম। ১৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত দামে ভেলা বিক্রি হয়েছে। বিক্রেতার জানালেন, অন্যান্য বছরের থেকে এবার ভেলার চাহিদা বেড়েছে।
তবে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে সবকিছু নষ্ট করে দিলেও আশার আলো দেখেছিলেন ব্যবসায়ীরা 2021 সাল টি। তাও দুঃখের কাল 2021 সাল।কোথাও যেন থমকে গিয়েছে বাঙালির পিঠেপুলি উৎসব সেই রকমভাবে টুসুর বিক্রিবাটা নেই তাই যারা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে ছোটখাটো কুটির শিল্পরা, টুসু বানিয়ে বিক্রি করে ছেলেমেয়েদের নতুন জামাকাপড় কিনে দিয়ে আনন্দে দিন কাটাবেন, সেটাও যেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে করোনা পরিস্থিতিতে । বিশেষ করে বাঁকুড়া জেলার শ্রেষ্ঠ পরব টুসু পরব। জয়পুরের বিক্রেতাদের মুখের হাসি করোনার থাবায় গ্রাস করে নিয়েছে।তাই বিশেষ এই পরবে অনুষ্ঠানে মতলেও মনটা কার্যত অভাবের গ্রাসে।